ওয়েব ডেস্ক: সরকারি দল নিজেরাই পরিকল্পিত নাশকতা ঘটিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছে এমন অভিযোগ করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের মানুষ বোঝে এগুলো কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। এ সময় ভোট বর্জন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, এরই মধ্যে তামাশার ভোটের একদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোববারের ভোটের ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারা ছবি দিয়ে পোস্ট করছে আওয়ামী লীগের লোকজন। গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের ভোটের ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারা পেপার বইয়ের ছবি প্রমাণ করে কী ধরনের নির্বাচনী তামাশা মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, গত শনিবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের নৃশংসতম বর্বরোচিত ন্যক্কারজনক ঘটনার পরই আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি। প্রকৃত দোষীদের আটক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছি।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সাত সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে মহানগর ডিবি পুলিশপ্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন এ ঘটনায় না কি বিএনপি নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ডিবি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনায় বিএনপিকে দুষছেন। কী হাস্যকর বয়ান। ক্রসফায়ারের নিত্যদিন একই কাল্পনিক গল্পের মতো তাদের প্রতিটি ঘটনায় গল্প তৈরি থাকে।
তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে তুলে নিয়ে গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এখন তাদের নৃশংস নির্যাতন করে দোষ চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর। প্রতিটি নাশকতার ঘটনার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও তাদের দলীয় পুলিশ প্রশাসনের মজ্জাগত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর দায় চাপিয়ে বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহিংস হিসেবে দেখাতে পারে। যেমনটা তারা ১৯৯৬, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে। প্রায় প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রশক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটা প্রকাশ হচ্ছে কোনোটা ঢেকে দিচ্ছে পুলিশ।
রিজভী আরও বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দিয়ে নারী শিশুসহ চারজন সাধারণ নিরীহ মানুষকে নৃশংসতমভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নাই। এ বর্বরতার ঘটনায় জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি। এ ক্ষমতা লিপ্সু সরকারের কোনো তদন্তের ওপর দেশের জনগণের ন্যূনতম আস্থা-বিশ্বাস নেই। কারণ তাদের তদন্তের টার্গেট থাকে বিএনপিকে দোষী বানানো। অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনোটাই আখেরে ধোপে টেকেনি।
রিজভী আরও বলেন, দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্য তথাকথিত ভোট রঙ্গ বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর বিপদের অতলে। এর মধ্যে এই তামাশার নির্বাচন বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বিরোধীদলের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের অটো পাস এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বাঁশখালী থানার ওসিকে হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সিইসিও বিএনপিকে হুমকি দিচ্ছেন।
গত ৪৮ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের গ্রেফতার, মামলা, আসামি এবং আহতদের তালিকা তুলে ধরে রিজভী জানান, গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫৫ জন নেতাকর্মীকে, আহত হয়েছে ৬০ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৬টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩৫৫ জন নেতাকর্মীকে।